ঈদের দিনে ১০টি কাজ করবেন

Assalamu Alaikum Wa Rahmatullahi Wa Barakatuh.

ভূমিকা

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা আল্লাহর তরফ থেকে দেওয়া তার বান্দাদের বিশেষ একটি উপহার। রামাদান মাস ব্যাপী আল্লাহর এবাদত করার পর আল্লাহ তায়ালা নগদ পুরস্কার হিসেবে ঈদুল ফিতরের আনন্দ আমাদের দিয়েছেন।
আর প্রথম কের ইবাদত অন্য করার পর হজের ইবাদত অন্য করার পর আল্লাহ তাআলা নগদ পুরস্কার হিসেবে ঈদুল আযহার আনন্দ আমাদের দিয়েছেন। আল্লাহর দেওয়া উপহারকে আল্লাহর দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী লালন করাই হল একজন বুদ্ধিমান মুমিনের কাজ।
আমরা আজ ঈদুল ফিতরের সুন্নাহ সমূহ নিয়ে আলোচনা করব। যেভাবে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদ উদযাপন করতেন সাহাবায়ে একরামরা ঈদুল ফিতরের ঈদুল আযহার কি কি আমল করতেন সেগুলো আমরা এইবার জানব।


ঈদুল ফিতরের ১০ টি সুন্নাহ

  • অন্যদিনের তুলনায় ঈদের দিনে একটু আগে আগে ঘুম থেকে ওঠা। ফজরের নামাজে উপস্থিত হওয়াটা নামাজে উপস্থিত হওয়ার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর সেই সাথে ঈদগাহে একটু আগে আগে যাওয়া এটি ঈদের দিনের প্রথম সুন্নাহ।
  • দ্বিতীয় সুন্নাহ হল খেজুর খেয়ে মসজিদে আসা। অথবা খেজুর যদি না থাকে তাহলে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেয়ে মসজিদে আসা আসা। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিষ্টি জাতীয় বস্তু খেয়ে মসজিদে আসতেন।
  • তৃতীয় সুন্নাহ হল গোসল করা সেই সাথে সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং মেসওয়াক করা। অর্থাৎ পবিত্রতার পর মেসওয়াক করে সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে বা ঈদগাহে।
  • চার নম্বর সুন্নাহ হল উত্তম পোশাক পরিধান করা। সাধারণত সবাই ঈদের দিনে পাঞ্জাবি পাজামা পরেই ঈদগাহে যায়।তবে পাঞ্জাবি পাজামার মধ্যে যেটা সবচেয়ে উত্তম অর্থাৎ ভালো পরিষ্কার সেইসব পোশাক পরে ঈদগাহে যাওয়া।
  • পাঁচ নম্বর সুন্নাহ হল ঈদগাহে যাওয়ার সময় পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। কখনো বাহন ব্যবহার না করা। যারা বৃদ্ধ বা অসুস্থ্য তাদের কথা ভিন্ন। তবে যাদের শারীরিক অবস্থা ভালো তাদের পায়ে হেটে ঈদগাহে যাওয়াটা সুন্নত। এতে ঈদের সৌন্দর্য বিকশিত হয়।
  • ছয় নাম্বার সুন্নাহ হলো ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতে বলতে যাওয়া। "আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুআল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ "যতক্ষণ আমরা ঈদগাহে যেতে থাকব তাকদীর বলতে থাকবো। ঈদগাহে যাওয়ার সময় গল্পগুজা করা উচিত নয়।
  • সাত নাম্বার সোনা হলো যেই পথে ঈদগাহে যাওয়া হবে তার বিপরীত পথে ফিরে আসা। যদি দ্বিতীয় কোন রাস্তা না থাকে তাহলে রাস্তার যে পাশ দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া হয়েছিল তার বিপরীত পাশ দিয়ে ফিরে আসা।
  • আট নম্বর সুন্নাহ হল ঈদের দিন হাসি খুশি থাকা। অর্থাৎ যতদূর সম্ভব হাসিমুখে থাকা। কোন কারনে মনে দুঃখ থাকলেও হাসিখুশি থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আপনাকে সেই দুঃখ কষ্ট থেকে বিরত রাখবেন। ইনশাআল্লাহ। ঈদের দিনে সবার সাথে হাসি খুশি মুখে থাকা এবং আনন্দ ও ঘন ভাবে সকলের সাথে থাকা এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ।
  • ঈদের এই নাম্বার সুন্না হল যথাসম্ভব মসজিদে বা বদ্ধ জায়গায় ঈদের সালাত আদায় না করা। উন্মুক্ত জায়গা বা মাঠে ঈদের নামাজ পড়া উত্তম। এতে ঈদের আনন্দ বৃদ্ধি পায়।তবে রাস্তাঘাট বন্ধ করে যাতে মানুষের চলাফেরা করতে সমস্যা হয় সেই রকম পরিবেশে ঈদের সালাত আদায় করা যাবে না। উন্মুক্ত কারো জায়গায় যদি সে অনুমতি দেন তাহলে সেই জায়গায় ঈদের সালাত আদায় করা যাবে।
  • ঈদের দশ নাম্বার এবং সর্বশেষ হল একে অন্যকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো। সেটি সাক্ষাৎ যোগে হতে পারে বার্তা যোগী হতে পারে। সাহাবী একরামরা একে অন্যের সাথে দেখা হলে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতেন এভাবে "গোটা রমজান ব্যাপী আপনি এবং আমি যে নেক আমল করেছি আল্লাহ তায়ালা আমাদের উভয়ের নেক আমল গুলোকে কবুল করে নিন"আরবিতে 'তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম, তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম 'একে বাংলায় আমরা বলতে পারি আল্লাহ তাআলা আপনার এবং আমার নেক আমল গুলো কবুল করুন।


কিছু কাজ আছে যেগুলো আমরা মনে করি সুন্নাহ কিন্তু সেগুলো সুন্নত নয়।

  • যেমন কিছু লোক মনে করে ঈদের দিনে কবর জিয়ারত করা সুন্নাহ। ঈদের দিনে যদি কেউ সময় পান হলে মা বাবার কবর জিয়ারত করতে যাবেন, অবশ্যই করবেন কিন্তু একে সুন্নাহ মনে করে করা যাবেনা।
  • অনেকে ঈদের নামাজের পরে কাঁধে কাঁধ মেলানোকে সুন্নাহ মনে করেন যাকে আমরা কোলাকুলি হিসাবে ও জানি। কিন্তু সেটাও সুন্নাহ নয়। অনেকদিন পরে কারো সাথে দেখা হয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন এর জন্য কাঁধে কাদ মিলাতে পারেন কিন্তু একে সুন্নাহ হিসেবে করা যাবে না।
  • অনেকে মনে করেন ঈদের দিনে নতুন পোশাক পরাটা সুন্নাহ। কিন্তু সেটা ভুল ধারণা আপনার যে পোশাক আছে তার মধ্যে থেকে উত্তম পোশাকটি পরিধান করতে পারেন। সেটা সুন্নাহ, কিন্তু নতুন পোশাকই যেবর্ধন করতে হবে সেরকম কোন বিষয় নয়। আপনার যেসব পোষাক আছে তার মধ্যে থেকেই উত্তম পোশাকটা পরিধান করাটাই হলো আসল সুন্নাহ।
  • ঈদের দিনে যুবসমাজ অনেক বেশি পাপের দিকে নিমজ্জিত হয়ে যায় যেমন ব্যান্ড পার্টি,বিভিন্ন ধরনের মিউজিক অনুষ্ঠান বোমা পোটকা ফোটানো ইত্যাদির মাধ্যমে তারা ঈদ পালন করে থাকে।
  • অনেক মা বোন আছেন যারা গোটা রমজান ধরে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করেছেন অথচ ঈদের সময় তারা পর্দার বিধানকে অঙ্গন করে তারা বিভিন্ন ছেলেপেলেদের সাথে মিসছেন। এবং বাহিরে তারা বিনা প্রয়োজনে ঘোরাফেরা করছেন।
এই অশ্লীল সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হওয়া উচিত। আল্লাহর দেওয়া উপহার আল্লাহর দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী পালন করা উচিত। তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদের ব্যবহারে খুশি হবেন এবং নেয়ামত দান করবেন।

লেখকের মন্তব্য

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বোঝার তৌফিক দান করুন।ঈদের সুন্নাহ সমূহ যেন আমরা ভালোভাবে পালন করতে পারি সেই হেদায়েত দান করুন।সুস্থ এবং সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করার তৌফিক দান করুন।
আপনাদের যদি আমি উপযুক্ত তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারি তাহলে আপনারা নিয়মিত আমার ব্লগ ভিজিট করবেন। সকলে ভালো থাকবেন অনিয়মিত নামাজ আদায় করবেন। নামাজ অবশ্যই সকল পাপাচার থেকে বিরত রাখে।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url