হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।প্রায় ১৪০০ বছর আগের কথা। আরব উপদ্বীপে যখন চরম বিশৃঙ্খলা পাপাচারে লিপ্ত,গোত্রে গোত্রে জ্বলছে আভিজাত্য এবং বংশ মর্যাদার লড়াই। সামান্য কারণেই হচ্ছে হত্যা। এই সময় সন্ত্রাস নৈরাজ্য আর হাহাকার করছিল।
ঠিক এমন সময় মানবতার মুক্তির দূত সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব এবং সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা জাহানের এদের জন্য এর আবির্ভূত হলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানবতার মুক্তির দূত।
আল্লাহ তাআলার এক অনন্য রহমতস্বর প্রেরিত। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কোরাইশ বংশের বনে হাশেম গোত্রে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১২ ই রবিউল আউয়াল সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আব্দুল্লাহ আর মাতার নাম আমিনা।


অতি অল্প বয়স থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। জন্মের পূর্বে পিতা আর ছয় বছর বয়সের মাকে হারান।এবং আট বছর বয়সে তার দাদা মৃত্যুবরণ করেন। ইয়াতীম শিশু বড় হয়ে ওঠেন চাচার সযত্ন ও ভালোবাসায়।
মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সংবাদ আব্দুল মুত্তালিব সুনা মাত্রই ছুটে চলে আসেন। এবং পরম যত্নের সাথে কোলে নিয়ে কাবার ভিতরে প্রবেশ করেন। অতঃপর তার নাম রাখেন মোহাম্মদ। যার অর্থ প্রশংসিত। মা আমিনা গর্ভ অবস্থায় স্বপ্নযোগে পাওয়া প্রাপ্ত নাম অনুসারে আহমদ। অর্থ উচ্চ প্রশংসিত। বাল্যকাল হতে মোহাম্মদ ও আহাম্মদ উভয় নামে প্রচলিত ছিল। উভয় নামই পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে। আরবের রীতি অনুযায়ী মরুভূমি আবহাওয়া ওঠার মাধ্যমে সুষ্ঠু গঠনের জন্য রেখে দেওয়া হয় দুধ মা হালিমার কাছে।
নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার মায়ের কাছে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতানি মৃত্যুর পর আব্দুল মোতাল্লেব অর্থাৎ তার দাদা তার লালন পালনের দায়িত্ব দেন। তিনি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে খুব স্নেহ করতেন।
এমনকি নিজের ছেলেদের ওপর তাকে প্রাধান্য দিতেন। দাদা আব্দুল মুত্তালিব এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর তত্ত্বাবধ্ধনেই ছিলেন। দাদার মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিব তার দায়িত্ব নেন। যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ইসলামের বয়স ছিল আট বছর তখন তার দাদা মারা যান। তিনি তার চাচা আবু তালিব কে কাজের সাহায্য করতে। চাচার বউকে জড়ানো এবং ব্যবসা সকল বিষয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সঙ্গ দিতেন।
মক্কার ধনী মহিলা খাদিজা বিনতে খলিদ বিভিন্ন লোককে অন্য দিয়ে ব্যবসা করাতেন এবং তিনি লাভের একটা অংশগ্রহণ করতেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সততা সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততা প্রশংসনীয় মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর শুনে হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা তিনি তার কাছে ব্যবসার প্রস্তাব পাঠান হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাজি হন এবং ব্যবসা শেষে অনেক বেশি লাভ সহ তার সবকিছুই বুঝিয়ে দেন।
রাসুলের এই মহৎ গুণ এবং অলৌকিক সংকেতের কথা শুনে খাদিজা রাদিআল্লাহু তা'আলা তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। এবং উভয়ের সম্মতিতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তখন খাদিজার বয়স ছিল 40 বছর। যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কোন বিয়ের প্রয়োজন মনে করেননি। এরপর আল্লাহ তাআলার হুকুম এবং ভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সমোট 11 টি বিয়ে করেন।
তাদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছিল কেউ ছিল রাসূলের বড় কেউ ছিল ছোট। এরমধ্যে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা ছিলেন অন্যতম। অথচ সকল স্ত্রীর সাথেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছিল ভালোবাসার মধুর সম্পর্ক। আল্লাহর হুকুমে জিব্রাইল আলাই সাল্লাম এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর নাযিল করা হয় আল কোরআন। যেটি ছিল মানবতার মুক্তির দিশারী ও পথপ্রদর্শক।
আল্লাহ তায়ালা সকল বিষয়ের পুঙ্খানু পঙ্খিকভাবে কোরআন শরীফে তুলে ধরেছেন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল প্রকার কাজের সঠিক প্রদর্শক হল আল কোরআন। যা অনুযায়ী জীবন যাপন করলে সকল প্রকার বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সাফল্যের দ্বারে পৌঁছাবে।একদিন জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে গভীর কন্ঠে তাকে বলেন 'পড়ুন'। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন আমি তো পড়তে জানি না। জিব্রাইল আলাই সাল্লাম পুনরায় একই প্রশ্ন করলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন আমি পড়তে জানি না। তৃতীয়বার জিব্রাইল (আ:) মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর বললেন পড়ুন তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন শরীফের সূরা আলাক এর প্রথম পাঁচটি আয়াত পাঠ করলেন।
তারপর জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে সাথে সেখান থেকে চলে গেলেন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বয়স যখন 51 বছর ৬ মাস তখন মিরাজ ভ্রমণের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়। মিরাজে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম প্রথমে মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসে যান। অতঃপর সেখান থেকে এক এক করে সাত আসমান অতিক্রম করে মহান আল্লাহর আরশে আজিমে তাসরিফ গ্রহণ করেন।
এই সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিধান লাভ করেন। মিরাজে গিয়ে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত এবং জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখে আসেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আল্লাহ তাআলার আদেশে মানুষের মধ্যে ইসলাম প্রচার করতে শুরু করেন। প্রথমে গোপনে গোপনে ইসলামের দাওয়াত প্রচার করতেন। তারপরে প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করা হয়।
এই সময় থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। মুসলমানগন মুশরিকদের সকল নির্যাতন ও নিপীড়ন ধৈর্য অধীনতার সাথে সহ্য করতে। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাদেরকে জান্নাত লাভের আশায় ধৈর্যধারণ ও শান্ত থাকার পরামর্শ দেন।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকাল হতে চিন্তা মগ্ন থাকতেন। তিনি ছিলেন নিপীড়িত শোষিত মানুষের উপর সহানুগতিশীল। আরববাসী তার নম্রতা, বিনয়, সত্যবাদিতা ও সৎ স্বভাবের জন্য তাকে আলামিন উপাধি দেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর আশ্রয়দাতা চাচা আবু তালিবের মৃত্যুকে কুরাইশরা সুযোগ গ্রহণ করল।
তার ওপর নিপীড়ন মাত্রা আগের চাইতে অনেক বাড়িয়ে দিল। এ কঠিন পরিস্থিতিতে সহযোগিতা এবং আশ্রয় পাওয়ার আশায় তিনি তায়েফ গমন করলেন। কিন্তু সেখানে ভাষা দুর্ব্যবহার ছাড়া কিছুই পেলেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালামকে পাথর নিক্ষেপ করে তারা আহত করলেন। এর ফলে তিনি মক্কায় ফিরে আসেন। কুয়াশা মোঃ সাঃ কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে।
কিন্তু যারা প্রতিবারে ব্যর্থ হয় এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলকে হেফাজত করেন। মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মদিনায় পৌঁছে তাকওয়ার ভিত্তিতে ইসলামে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করলেন। বর্তমানে মদিনা শরীফে এই মসজিদটি মসজিদে কুবা নামে পরিচিত।
মদিনাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সর্ব প্রথম যে পদক্ষেপ করেন তাহলে মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আনসার ও মুজাহিদের মাধ্যে ভাতৃত্ব স্থাপন।ষষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাসে দবি সাঃ ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় যাত্রা করলেন। কুরাইশরা বাধা দিলে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদাইবিয়া নামক জায়গায় অবস্থান করেন।
এখানে সম্পাদিত হয় হুদাইবিয়া সন্ধি নামে প্রখ্যাত বিশ্বের প্রথম লিখিত চুক্তি সন্ধি। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে মক্কার বিজয় এক ঐতিহাসিক এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ১৪৩৪ বছর আগে অষ্টম হিজরিতে আয় বিনা রক্তপাতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নেতৃত্বে মুসলমানরা জয় করেন পবিত্র মক্কা।
মক্কা বিজয় ছিল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দূরদর্শিতা বিচক্ষণতার অসাধারণ স্বাক্ষর। মাত্র ১০ হাজার মুসলিম সৈন্য নিয়ে মক্কা নগরী বিজয় করেছিলেন। যুদ্ধের পর তিনি ঘোষণা দেন মক্কা সকলের জন্য পবিত্র ও নিরাপদ।
বিদায় হজ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালে সফর মাসে সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচন্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির উপরে উষ্ণতা অনুভব হচ্ছিল। অসুস্থরত অবস্থায় তিনি ১১ দিন নামাজের ইমামতি করেন। তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর কাছে সাত কিংবা আট দিনার ছিল। মৃত্যুর পূর্বে তিনি এগুলো দান করে দেন।
অবশেষে ১১ হিজরী সালের ১ তারিখে রবিউল আউয়াল মাসে তিন ইন্তেকাল করেন। এ সময় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বয়স ছিল ৬৩ বছর। ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস মোতাবেক নবীর দুনিয়াতে ধন-সম্পদ রেখে যান না তারা রেখে যান তাদের আদর্শ। আর মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখে গেছেন পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলাম। যেটি সর্বকালের একমাত্র মনোনীত ধর্ম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url