হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সংক্ষিপ্ত জীবনী

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আজ আমরা জানবো হযরত ঈসা আলাই সাল্লাম এর জীবনী। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর মাতার নাম ছিল মরিয়ম। তিনি নাসিরা নামক একটি শহরের অধিবাসীনি ছিলেন। এই শহরটি বায়তুল মুকাদ্দাস এর অদূরেই অবস্থিত ছিল। ছোটকাল থেকেই বিবি মরিয়ম পিতা মাতার মানত পূরণ করার জন্য বাইতুল মুকাদ্দাসের খেদমতে নিযুক্ত ছিলেন। তার পিতার নাম ছিল ইমরান। এবং মাতা ছিলেন নবী জাকারিয়া আলাই সাল্লাম এর শালিকা বিবি হান্না।


বিবি মরিয়মের নামাজ রত অবস্থায় একদিন হঠাৎ করে ফেরেশতা জিব্রাইল অবতরণ হয়ে বললেন। 'তোমার প্রতি সালাম,তুমি আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তা আল্লাহ তোমার সাথে রয়েছেন '।বিবি মরিয়মের সাথে এ ঘটনা ঘটায় তিনি ভিত হয়ে গেলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন কে আসলো এবং আমাকে কিসের সালাম দিল। হযরত জিব্রাইল আলাই সালাম তাকে বললেন আমি আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাঈল। তুমি ভীত হয়ো না তুমি পবিত্র সন্তান লাভ করবে। এই সুসংবাদটি তোমাকে দিতে এসেছি। তিনি আরোহিত হয়ে গেলেন আর বললেন আমি যে কুয়াঁরী। আমিতো এখনো কোন স্বামীর সঙ্গ লাভ করিনি।
জিব্রাইল আলাই সালাম বললেন আল্লাহর কুদরতের মহিমা এটি হবে। আল্লাহর কাছে এটি কঠিন কাজ নয়। এই খবর তাকে দিয়েই হযরত জিব্রাইল আলাই সাল্লাম সেখান থেকে চলে গেলেন। এর ছয় মাস পূর্বেই নবী জাকারিয়ার স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছিলেন। মরিয়ম যদিও আল্লাহর কুদরতে সন্তান সম্ভবা হলেন, কিন্তু তার দেশের লোকেরা ছেলে মেনে নিতে পারল না। তারা বলতে লাগলো কুয়াঁরী নারীর এভাবে কেমন করে বাচ্চা হয়। এ ঘটনায় থাকে হয়তো দেশ থেকে বিতাড়িত করা হলো, এবং তাকে গ্রাম ছাড়া হতে হলো।
সঙ্গী সহায় হীন অবস্থায় গর্ভবতী মরিয়ম একটি নির্জন জায়গায় সন্তান প্রসব করলেন। বিপদ অসংখ্য পণ্য মরিয়ম একটি পতিত প্রান্তে খেজুর গাছের নিচে আসন গ্রহণ করলেন। এভাবেই পৃথিবীর মহাসম্মানিত নবী সেই নগণ্য স্থানে ভূমিষ্ঠ হলেন। যে নবীর ধর্ম অনুসরণকারীরা আজ পৃথিবীময় বিস্তৃত, শক্তি এবং সন্মানের দ্বারা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করে রয়েছে তাদের নবী ভূমিষ্ঠ হলেন একটি আস্তাবলের অপব্যবহার্য আঙিনায়।
দরিদ্র পরিবারের পিতা-মাতার সন্তানেরাও এই সময় একটি শান্তির উপকরণ পায় কিন্তু মরিয়মের সন্তান সবার জন্য ওই আসতে বলের ঘরটুকু ছাড়া আর কিছু ছিল না। তার নামকরণ করা হলো ঈসা তিনি নসিহ নামে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। হযরত মুসা আলাই সালাম এর শরীয়ত অনুসারে বাদশা কিংবা পয়গম্বর তার পদ বহন হওয়ার অনুষ্ঠানে তোর লবণ করার নিয়ম ছিল। প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করলে একজোড়া ঘুঘু পাখি উৎসর্গ করার নিয়ম ছিল হযরত ঈসা আলাই সালাম এর কালে। এই কারণে বিবি মরিয়ম তার সন্তানকে নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে গেলেন এবং পাখি মানত করলেন।
এরকম সময় জ্যোতিষীরা ঈসা আলাই সাল্লাম এর খোঁজ পান। তারা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। হযরত ঈসা আলাই সালাম এর জন্ম হয়েছে তারা এটি জানতে পেরেছিল। সেই সময়কার বাদশা এটি শুনে ভীত হলেন। বাদশা তখন ওই সব জাদুঘর কে বললেন। তারা যেন সেই বালকের সন্ধান করে কোথায় আছে তা বের করে। অগ্নি পূজো করা খুঁজতে খুঁজতে বেবি মরিয়মের কাছে পৌঁছায়। এবং শিশুকে সিজদা করল।


রাতে তারা স্বপ্ন দেখল তাদেরকে হিউজ এর কাছে ফিরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। মরিয়ম এ রূপ স্বপ্ন দেখলেন যে বাদশা এই সন্তানের শত্রু। এই সন্তান যদি কোন ভাবে বাদশার হাতে যায় তাহলে বাদশা তাকে মেরে ফেলবে। সে যেন শিশুটিকে নিয়ে মিশরে চলে যায়। জ্যোতিষীরা যখন বাদশার কাছে ফিরে গেল না তখন বাদশা খুবই রাগান্বিত হলেন। বাদশা তখন হুকুম করলেন যে বাইতুল্লাহ এবং তার আশেপাশে যতগুলো বসতি আছে সকলের সন্তানকে যেন হত্যা করে ফেলা হয়। এর মধ্যেই মরিয়ম তার সন্তানকে নিয়ে মিশরে রওনা হয়ে গিয়েছিলেন।
হিরোস যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন মরিয়ম তার সন্তানকে নিয়ে মিশরী অবস্থান করছিলেন। হিরোস যখন মৃত্যুবরণ করেন এই সংবাদ শুনে মরিয়ম তার সন্তানকে নিয়ে নিজ শহর নাসিরায় চলে আসেন। মরিয়মের ছেলে আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো। বড় হওয়ার সাথে সাথেই তার প্রখর জ্ঞান ও তীক্ষ্ণ মেধা বিকশিত হতে লাগলো।
আল্লাহর বিশেষ যে একটি অনুগ্রহ তার ওপর রয়েছে দিন দিন তা প্রকাশিত হতে লাগলো। ঈদের উৎসবে মরিয়ম তার সন্তানকে নিয়ে হিরো সালাম এ যোগদান করতেন। ঈসা আঃ সালামের বয়স যখন ১২ বছর তখন তিনি এরু সালামের বড় বড় জ্ঞানী ব্যক্তি এবং পন্ডিত বরকতের সাথে তিনি ধর্ম বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। তার তথ্য জ্ঞান এবং সঠিকতা দেখে পন্ডিতবর্গ অবাক হয়ে যেতেন।
ক্রমান্বয়ে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আধ্যাত্মিক জ্ঞানের কন্যাতে লাভ করেন। ইসা আলাই সালাম এর বয়স যখন ৩০ বছর তখন তিনি ওহী লাভ করেন। এবং তখন থেকে তিনি নবী রূপে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। হযরত ইয়াহিয়া বিবি মরিয়মের খালাতো ভাই হতেন। তিনি যার নদীর তীরে ধর্ম প্রদেশ দান করতেন। হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম সেখানে গিয়ে ওয়াজ করতে শুরু করেন। ওহি আসার পর থেকে ইঞ্জিল কিতাব অবতীর্ন হতে শুরু করে।
তিনি তার নবুয়তের প্রমাণ স্বরূপ বিভিন্ন অলৌকিক কার্য বলি দেখাতে শুরু করেন। যেমন মাটি দিয়ে পাখি বানিয়ে তা উড়িয়ে দেওয়া, অন্ধকে দৃষ্টি দান, বোবা কে বাকশক্তি দান, অসুস্থ রোগীকে আরোগ্য করা, পানির উপর হাটা ইত্যাদি তার মোজেজা ছিল। তার আধ্যাত্মিক শক্তির ফলে বহুরোগী আরো গোলাপ করে। সর্বপ্রথম যারা ঈসা আঃ সালামের সাথে ছিলেন তাকে সাহায্য করেছিলেন তাদেরকে হামারি বলা হতো। তারা সর্বদা হযরত ঈসা আলাই সালাম এর সাথে থাকতেন।
যে সময় হযরত ঈসালে সাল্লাম নবী হন সেই সময় ইয়াহুদী গরুরা অতিশয় শিথিল হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে ভন্ডামি প্রবেশ করেছিল, তাদের মধ্যে ছিল শুধু ধর্মের বাহির আবরণ। হযরত ঈসা আলাই সাল্লাম এর ঘর বিরোধী ছিলেন তারা। এবং হযরত ঈসা আলাই সাল্লাম ও তার বক্তৃতায় ইয়াহুদী ধর্ম গুরুদের কঠোর সমালোচনা করতেন। এর ফলে ইয়াহুদিরা তার আরো ঘর শত্রুতে পরিণত হয়। কিন্তু হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের বাণী ছিল আল্লাহ তাআলার বাণী। এ কারণে এবার নিজেই শুনতো তার হৃদয় শিথিল হয়ে যেত। এই বাণী শুনে শান্তি লাভ করত।
ইয়াহুদীরা কোনভাবেই হযরত ঈসা আলাই সাল্লাম এর সাথে নিজেদের তুলনা করতে পারতেন না। হযরত ঈসা আঃ এর বক্তৃতা শুনে তারা সব সময় হার মানতেন। হযরত ঈসা আঃ তার বক্তৃতায় সবসময় আসমানী বাদশা তথা আল্লাহর কথা উল্লেখ করতেন। এর ফলে ইয়াহুদীদের একটি সুযোগ জুটে গেল। তারা আসমানে বাদশার কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অন্যভাবে শোনাতে লাগলো। তাকে রাজদ্রোহী হিসেবে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। অদৃষ্টের এমনই বিলম্ব না যে হাওয়ারি ডল ইসা আলাই সালাম এর বিশ্বস্ত বন্ধুরূপে রাজ করতেন। তাদের মধ্যে থেকে একজনকে গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল।
তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল ইয়াহুদ। শত্রুদের কাছে থেকে তিনি টাকা গ্রহণ করে ঈসা আলাই সাল্লাম কে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন। হারারিদের মধ্যে পৃতর ছিল একজন ঘনিষ্ঠ এবং সঙ্গী। রাজদ্রোহের অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য তিনিও সম্রাটের দরবারে নিজের পরিচয় গোপন করে রাখেন। এবং হযরত ঈসা আলাই সাল্লাম এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই বলে জানান। হযরত ঈসা আলাই সাল্লাম ভীত হলেন এবং রাজ দরবারে তাহার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হলো।
তখনকার মৃত্যু কার্যকর করা হতো শলিতে জড়িয়ে। আর শলির আকৃতি হল একটি লম্বা কাঠের উপরের অংশে আরো একটি কার্ড আড়াআড়িভাবে জুড়ে দেওয়া। এর মধ্যে অপরাধীকে এমন ভাবে জোরে দেওয়া হতো যে অপরাধীর পৃষ্ঠদেশ অর্থাৎ পিঠ কাঠের ওই সংযুক্তিস্থলের ওপর রক্ষিত হতো। আড়াআড়ি কাঠের দুই দিকে দুই হাত বিস্তৃত করে দিয়ে পেরেক মেরে দেওয়া হতো। কারো কারো হাঁটুতে ও পেরেক মেরে কাঠের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হতো। এ অবস্থায় শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তি শলিতে থেকেই খোদা তৃষ্ণার কাতরতায় ছটফট করে মারা যেত।
হযরত ঈসা আঃ কেও শলিতে সেইভাবে রেখে বিধ্বস্ত করা হলো। পরের দিনটি ছিল ইয়াহুদীদের উৎসবে দিন। সেই দিন তাদের ধর্ম অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে শলিতে রাখা যাবে না। হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে তার আগের দিনই শলিতে চড়ানো হয়েছিল। সেই দিন যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে শুলি থেকে নামানো হয় তখন তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। অতঃপর তাকে গোরস্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কোন এক সদয় ব্যক্তি তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। ওরে তিনি চেতনা লাভ করলেন অতঃপর তিনি নিরুদ্দেশ হন।
তিনি কোথায় কিভাবে আত্মগোপন করেন তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে পবিত্র কোরআন শরীফে তার সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে তাকে হত্যা করা হয়নি, তিনি ক্রোসে প্রাণ দান করেননি। বরং মৃত্যুর মতোই ধারণা করা হয়েছিল। পরে আল্লাহ তায়ালা তাকে পৃথিবী থেকে তুলে নিলেন। এর ৫ শত বছর পর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই পৃথিবীতে ইসলাম প্রচারের জন্য অবতরণ হলেন।

লেখক এর মন্তব্যঃ

আপনাকে যদি আমি উপযুক্ত তথ্য দিতে পারি তাহলে আপনি আপনার সকল বন্ধুদের সাথে এ বিষয়টি শেয়ার করবেন এবং ভালো লাগলে আমার ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করবেন। আপনাদের যদি আমার লেখা কনটেন্ট পড়ে ভালো লাগে। তাহলেআমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন। আপনাদের জন্য আমি আরো নতুন নতুন বিষয়গুলো তুলে ধরব আপনাদের সামনে। সবাই ভালো থাকবেন। ফি আমানিল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url