গোসল ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, এবং মোস্তাহাব

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আজকে আপনারা জানবেন গোসলের বিষয়ে। আপনারা অবশ্যই জানেন গোসল চার প্রকার ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব। এই চারটি বিষয় নিয়ে খন্ড খন্ড আকারে আপনাদের কাছে আলোচনা করব। একজন মুসলিম হিসাবে কোন কারনে গোসল ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, এবং মোস্তাহাব হয় তা জানা জরুরী।


ফরজ গোসল

গোসল ফরজ হওয়ার যে কারণ সমূহ রয়েছে সেই কারণ সমূহ সম্পর্কে আমাদের অবগত হতে হবে।এবং আমাদের কারো উপরে যদি গোসল ফরজ হয় তাহলে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে গোসল করতে হবে। গোসল ফরজ হওয়ার সত্ত্বেও যদি গোসল না করা হয় তাহলে কোন ভাবেই ইবাদত বন্দেগীতে সামিল হওয়া যাবে না। আর গোসল অবশ্যই ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী। আপনার গোসল যদি ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী না হয় তাহলেও আপনার গোসল আদায় হবে না।

গোসল ফরজ হওয়ার প্রধান পাঁচটি কারণ সমূহ

  • প্রথম কারণ, যদি স্বামী স্ত্রী সহবাস করে। অথবা, উত্তেজনা বসত যদি কোন কারণে,কোন পদ্ধতিতে বীর্যপাত ঘটায় বা ঘটে যায় তাহলে ঐ ব্যক্তির ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে।
  • দ্বিতীয় কারণ, স্বামী স্ত্রীর মিলনের যদি স্বামীর লিঙ্গের অগ্রভাগ স্ত্রীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে,তাহলে তার ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে। এই কাজের সময় যদি বীর্য নাও বের হয় তবুও তাদের ওপর গোসল ফরজ।
  • তৃতীয় কারণ, যদি কোন ব্যক্তির স্বপ্নদোষ হয় তাহলেও তার ওপর গোসল ফরজ হবে। এটি শুধু স্বপ্ন দেখার মাধ্যমে প্রমাণিত হবে না, বরং স্বপ্ন দেখার পরে যদি পরিপূর্ণ আলামতের দ্বারা বোঝা যায় যে আপনার স্বপ্নদোষ হয়েছে এবং এর মাধ্যমে বীর্য বের হয়েছে তাহলে তার ওপর গোসল ফরজ হবে।
  • চতুর্থ কারণ, যদি কোন মহিলার হায়েস বা মাসিক বন্ধ হয় তাহলে তার উপর গোসল ফরজ। নাসিক বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই ফরজ গোসল আদায় করতে হয়। এটি সাধারনত বিজ্ঞানের ভাষায় ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে।
  • পঞ্চম এবং সর্বশেষ কারণ, মহিলাদের সন্তান প্রসবের পর যখন নেফাস বন্ধ হবে, অর্থাৎ সন্তান প্রসবের পরে যে রক্তটি আসে সেই রক্তটি যখনই বন্ধু হবে তখনই তার ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে।

ফরজ গোসল আদায়ের নিয়ম

  • প্রথমত গড়গড়া সহ কুলি করতে হবে।
  • গোসল করার সময় নাকের নরম স্থান পর্যন্ত যেন পানি পৌঁছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, অথবা ওযু করার নেই নাকি পানি দিতে হবে। যেন পানি নাকে নরম জায়গা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
  • সম্পূর্ণ শরীর পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শরীরের সকল জায়গাতে যেন পানি পৌঁছে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন অঙ্গের কোন জায়গায় চুল পরিমাণ ও স্থান শুকনো না থাকে।

ওয়াজিব গোসল

গোসল ওয়াজিব হওয়ার কারণ সমূহ

  • প্রথম কারণ, কোন কাফির বাহিধর্মী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর যদি সে নাপাক অবস্থায় থাকে তাহলে তার ওপর গোসল করা ওয়াজিব। আর নাপাক অবস্থায় না থাকলেও তার ওপর গোসল করা মুস্তাহাব।
  • দ্বিতীয় কারণ, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ানো।কোন ব্যক্তি মারা গেলে তাকে গোসল করানো ওয়াজিব।
  • তৃতীয় কারণ, যদি কোন ব্যক্তি ১৫ বছরের পূর্বেই বালেগ হয় তাহলে তার ওপর গোসল করা ওয়াজিব।

ওয়াজিব গোসল আদায়ের নিয়ম

ওয়াজিব গোসল আদায়ের সাধারণত সেই রকম কোন নিয়ম নেই। তবে সুষ্ঠুভাবে গোসল করা ওয়াজিব গোসলের একটি অংশ। তাছাড়া আপনার যদি কোন নিয়ম জানা থাকে তাহলে সেই নিয়মে গোসল করতে পারেন।

সুন্নত গোসল

গোসল সুন্নত হওয়ার কারণ সমূহ

  • প্রথম কারণ, জুম্মার সালাত আদায় করার জন্য গোসল করা সুন্নত।
  • দ্বিতীয় কারণ, ঈদের সালাত আদায় করার জন্য। এখানে ঈদ বলতে উভয়ইদের কথায় বোঝানো হয়েছে। ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার সালাতের আগে গোসল করা সুন্নত।
  • তৃতীয় কারণ, ইহরাম বাধার পূর্বে অর্থাৎ হজের জন্য ইওরাম বাধার পূর্বে গোসল করা সুন্নাত।
  • চতুর্থ কারণ, আরাফার ময়দানে দুপুরের পর হজের গোসল করা।

সুন্নত গোসল আদায়ের নিয়ম

  • গোসলের শুরুতেই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোঁয়া।
  • কুলি করা।
  • শরীরে কোনো নাপাক বস্তু নজরে পড়লে ধৌত করা।
  • ওযু করা।
  • মুখ হাত ধোয়া।
  • মাথা মাসেহ করা।
  • মাথায় পানি দিবেন। ধান কাধ বাম কাঁধে পানি দেবেন।
  • বের হওয়ার সময় পা ধুয়ে বের হয়ে আসবেন।

মুস্তাহাব গোসল

গোসল মুস্তাহাব হওয়ার কারণসমূহ

  • প্রথম কারণ, বিধর্মীদের ইসলাম গ্রহণের পর। অর্থাৎ অন্য যেকোনো ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর গোসল করা মুস্তাহাব। যদি তার শরীর পাক পবিত্র থাকে তবেও তাকে গোসল করতে হবে। এটি গোসল মুস্তাহাব হওয়ার একটি কারণ।
  • দ্বিতীয় কারণ, চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহণ হলে। অর্থাৎ চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্য গ্রহণের পর গোসল করতে হবে। এটি গোসলে মুছতেহাবের একটি কারণ।
  • তৃতীয় কারণ, শবে বরাতের গোসল করা।
  • চতুর্থ কারণ, শবে কদরের গোসল করা।
  • পঞ্চম কারণ, শিঙ্গা লাগাবার পর। নিজামা চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই সিংগা ব্যবহার করা হয়। এতে মানুষের সব ধরনের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা বিদ্যমান। এই চিকিৎসা নেওয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব।
  • ষষ্ঠ নম্বর, মক্কা ও মদিনা শরীফে প্রবেশ করার জন্য।
  • সপ্তম কারণ, মুজদালিফায় অবস্থান করার জন্য। অর্থাৎ জিলহজ মাসের তারিখে তাদের জন্য মুরসালিখায় অবস্থান করতে হয়। তার আগে গোসল করা মুস্তাহাব।
  • অষ্টম কারণ, বিপতকালে নামাজ পড়ার জন্য। অর্থাৎ বিপদ কালে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য যে নামাজ আদায় করা হয়। তার পূর্বে গোসল করা।
  • নবম কারণ, তাওবার নামাজ পড়ার জন্য। আল্লাহর কাছে তওবা করার জন্য যে সালাত আদায় করা হয় তার পূর্বে গোসল করার মুস্তাহাব।
  • দশম কারণ, সফর থেকে বাড়ি ফেরার পর। বাহিরে কোথাও থেকে বাসায় এসে গোসল করা মুস্তাহাব।
  • একাদশ কারণ, রাজ দরবারে হত্যার হুকুম হলে। যেটা এখন কোট এবং আদালতের জন্য প্রযোজ্য।
  • দ্বাদশ কারণ, পাগল বা মানসিক অসুস্থ রোগী ভালো হয়ে গেলে তার ওপর গোসল করা মুস্তাহাব।
  • ত্রয়োদ কারণ, মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর নিজে গোসল করা।
  • চতুর্থদশ কারণ, স্বপ্নদোষ হওয়ার পর স্ত্রী সহবাস করতে হলে, সহবাসের পূর্বে গোসল করা।

মোস্তাহাব গোসল আদায়ের নিয়ম

  • সর্বপ্রথম গোসলের নিয়ত করতে হবে। বাংলায় :নাপাকি দূর করার নিমিত্তে আমি গোসলের নিয়ত করলাম।
  • দ্বিতীয় নিয়ম হচ্ছে, কেবলামুখী হয়ে গোসল করা।
  • তৃতীয় নিয়ম, পরিমিত পরিমাণ পানি ব্যবহার করা। আপনার গোসল করতে যতটুকু পানি প্রয়োজন যতটুকু পানি ব্যবহার করা। কমও নয় বেশিও নয়।
  • চতুর্থ নিয়ম, শরীর ভালোভাবে পরিষ্কার করা। শরীরে কোন জায়গায় নাপাকি লেগে থাকলে ভালোভাবে ঘসে পরিষ্কার করা।
  • পঞ্চম নিয়ম, গোসলের পর শরীর থেকে ফেলা, গোসলের পরপরই আপনি আপনার কাপড় পরিধান করে নেবেন।

লেখক এর মন্তব্য

আপনাদের যদি আমি উপযুক্ত তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারি। বা অজানা কোন বিষয় আপনাদের শেখাতে পারি তাহলে নিয়মিত আমার ব্লগে লেখা পোস্টগুলো পড়বেন। এবং সাপোর্ট হিসেবে পাশে থাকার চেষ্টা করবেন। দোয়া করি সকলে ভালো থাকবেন, এবং আমার জন্য দোয়া করবেন। আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url