কোন ফলে কী উপকার জেনে নিন এক নিমেষে

ফল আল্লাহর এক অপূর্ব নিয়ামত। কথায় আছে ফল ই বল। বর্তমানে ফল একটি অর্থকারী ফসল। ফল গাছ আমাদের কাঠ দেয় ছায়া দেয় এবং আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে আছে ভেষজ ও ঔষধি গুণ। বেশি বেশি ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লাভ করা যায়। এবং শরীরের ভারসাম্য রক্ষা থাকে। এক এক রকম ফলে এক এক রকম পুষ্টিমান বিদ্যমান থাকে। কিছু ফল শরীরের জন্য উপকারী আবার কিছু ফল মারাত্মক ক্ষতিকর। আজ আমরা কোন ফল খেলে কি ধরনের উপকার হয় তা সম্পর্কে জানব।

১২ মাসে ১২ ফল না খেলে যায় রসাতল

আমাদের দেশের প্রায় অধিকাংশ লোক পুষ্টিহীনতার শিকার। বাংলাদেশের প্রায় ৮৮ ভাগ লোক ভিটামিন এ, ৯০ ভাগ লোক ভিটামিন সি, ৯৩ ভাগ লোক ক্যালসিয়ামের অভাবে ভোগেন। এছাড়া প্রায় ৭০ শতাংশ পুরুষ, ৭৩ শতাংশ শিশু এবং ৪৫% মহিলা রক্তশূন্যতায় হবে ভোগে। এইসব পুষ্টির অভাব পূরণের ক্ষেত্রে ফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোন ফলের কি উপকার ও পুষ্টিগুণ

কাঁঠাল

বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। কৃষি তথ্য সার্ভিসের বর্ণনা অনুযায়ী, কাঁঠালের প্রচুর এনার্জি রয়েছে। কাঁঠালের শর্করার পরিমাণ বেশি। কাঁঠাল হলো গ্রীষ্মকালীন ফল। পাকা কাঁঠালের প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে ৯০ কিলো ক্যালরি শক্তি। এবং খনিজ লবণের পরিমাণ প্রায় ০.৯ গ্রাম। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন রয়েছে।
এইসব উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী। এছাড়াও কাঁঠালে রয়েছে থায়ামিন রিবোফ্লাভিন ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম সোডিয়াম আয়রন জিংক এবং নায়াসিন সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে যা রাতকানা রোগের প্রতিরোধ করে। এছাড়াও কাঁঠালের থাকা পুষ্টিগণের কারণে তো উচ্চচাপের উপশম হয়।

আম
পুষ্টি স্বাদ ও গুনে অতুলনীয় একটি ফল হল আম। কৃষি তথ্য সার্ভিস এর বর্ণনা অনুযায়ী, আয়রন ও সোডিয়াম এর ঘাটতি পূরণে বেশ কার্যকারী ফল হল আম। আম রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। আম ডায়াবেটিসের সাথে লড়াই করে।
ক্যান্সার কোষ মেরে ফেলতে সাহায্য করে। আমে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন যা জীবাণু থেকে দেহকে সুরক্ষা করে আমে রয়েছে ভিটামিন এ যা দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। আম পুরো শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। আম খেলে স্বাস্থ্য ভালো হয়।
আম খেলে চোখের আশেপাশের শুষ্কতা দূর হয়। কাঁচা আমের তুলনায় পাকা আমের শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। কাঁচা আমে থাকে শাকছেনিক এসিড। যার কারণে আম খেতে টক লাগে। আম পাকলে এইসব এসিড গুলো গ্লুকোজ এ পরিণত হয়। কাঁচা আম দেহের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। লিভারের সমস্যায় কাঁচা আম খাওয়া উপকারী। এটি বাইল এসিড নিঃসরণ বাড়ায়। অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া অপসারণ করে। দেহে নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।

পেয়ারা

বাংলাদেশে এখন সারা বছর ধরেই পেয়ারা পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ৫১ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি, ১১. ২০ গ্রাম শর্কর্‌ ০.৯০ গ্রাম গ্রাম আমিষ পাওয়া যায়। এছাড়াও ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ১০০ মাইক্রগ্রাম ক্যারোটিন থাকে। পেয়ারা কোন কোন ব্যক্তির জন্য এসিডিটির কারণ হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের জন্য এই ফলটি অত্যন্ত উপকারী।

তরমুজ

তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ট্রেস, চিন্তা কমিয়ে দেয়। তরমুজ প্রোটেস্ট ক্যান্সার, ফুসফুসে ক্যান্সা্‌ কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকবে, যা গ্রীষ্মকালে শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে ভূমিকা পালন করে। শরীরকে সুস্থ ও সতেজ করে তোলে। এছাড়া এতে থাকা ক্যারোটিনের চোখকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। দৃষ্টিশক্তির ওপর অত্যন্ত ভালো প্রভাব ফেলে।

লিচু

লিচু গ্রীষ্মকালীন একটি স্বল্পমেয়াদি ফল। রসালো এই ফলটি খেতে অনেক সুস্বাদু। খুব কম মানুষই আছে যারা লিচু পছন্দ করে না। লিচুতে থাকা খাদ্য শক্তি, শর্করা আমিষ ক্যালসিয়াম লৌহ ভিটামিন সি থাকে। এই ফলটি টিউমার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

আমড়া

আমরা ফল টি বাংলাদেশ বহুল প্রচলিত একটি ফল। গ্রামের গঞ্জে সকল জায়গায় আমড়া গাছ দেখা যায়। আমড়া ঔষধি গুনসম্পন্ন একটি ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী আমড়াতে ৬৬ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি, ১৫ গ্রাম শর্করা , ১.১০ গ্রাম আমিষ, ৫৫ কিলোগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৩.৯০ মিলিগ্রাম লৌহ ও ৮০০ মাইক্রগ্রাম ক্যারোটিন ও ৮৩.২০ গ্রাম জলীয় অংশ রয়েছে। এছাড়া পিত্ত ও কফ ক নিবারক রুজিবর্ধক হিসাবে আমড়া যথেষ্ট উপকারী। আমড়া রক্তে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

কালো জাম

জামের ভেতরে খাদ্যশক্তি, শর্করা, আমিষ, চর্বি, আশ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন সি ও ক্যারোটিন থাকে। এটি শরীরের হাড় মজবুত করে, ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জাম। জান টক টান টান রাখতে স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে কাজ করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে জামির নির্যাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি রেডিকেলের কাজ করে এবং বিকিরণে বাধা দেয়।

সফেদা

সফেদায় বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে। এদের মধ্যে ভিটামিন এ সি ও ই ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, কপার, আয়রন সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ থাকে। যা দেহের শক্তি যোগায়। এই ফলের ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে যা দাঁত এবং হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। সফেদা মানসিক চাপ কমাতে, অনিদ্র্তা ও বিষণ্ণতা দূর করতে ভূমিকা পালন করে।

বেল

বেলের মধ্যে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম রয়েছে। পেটের গানা অসুখ যেমন, আমশয়, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেল খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। খাবার হজম করতেও বেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

লটকন ও জামরুল

লটকন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। এই ফল খেলে বমি ভাব দূর হয় এবং তৃষ্ণা নিবারণ হয়। জামরুল ফলে রয়েছে ক্যারোটিন ও ভিটামিন বি। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য জামরুল একটি উপকারী ফল। এসব ফলের মধ্যে খাদ্য শক্তি থাকে না যা শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি বের করে দেয়।

লেখক এর মন্তব্যঃ

অন্যান্য খাবারের চেয়ে ফলমলে বলে বেশি পরিমাণে পুষ্টিমান বিদ্যমান থাকে। কোন ফলে কি রকম পুষ্টিমান থাকে খাওয়ার আগে তা জেনে নেওয়া জরুরী। এবং কোন শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাও জেনে রাখা প্রয়োজন। কিছু কিছু ফল রয়েছে যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এইসব ফল সম্পর্কে জানার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন।
আপনাকে যদি আমি উপযুক্ত তথ্য দিতে পারি তাহলে আপনি আপনার সকল বন্ধুদের সাথে এ বিষয়টি শেয়ার করবেন এবং ভালো লাগলে আমার ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করবেন।আপনাদের যদি আমার লিখা পড়ে ভালো লাগে তাহলে ইচ্ছা হলে আমার ব্লগটি নিয়মিত পরিদর্শন করবেন। সকলে ভালো থাকবেন ফি আমানিল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url