আদা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জেনে
আদার স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও উপকারিতা
আমাদের রান্নাঘরে ব্যবহৃত বিভিন্ন মশলার ভিতরে একটি হলো আদা। এটি হলো গাছের একটি রূপান্তরিত কান্ড। আদা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আদা (Zingiber officinale) এক প্রকারের সুগন্ধি মশলা যা সারা বিশ্বজুড়ে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এটি একটি প্রাচীনতম ওষুধি গাছ, যা তার ঔষধি গুণাবলীর জন্য পরিচিত। আদার স্বাদ ও গন্ধ রান্নায় বিশেষ একটি চরিত্র আনে, তবে এর স্বাস্থ্যকর গুণাবলীও অনেক। এই আর্টিকেলে আমরা আদার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা ও এর নিয়মিত ব্যবহারের সুফল নিয়ে আলোচনা করব।
আদা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
- হার্ড কে সুস্থ রাখায়ঃ আদা আমাদের হার্ড কে ভালো রাখে। আবার আদা সর্দি থেকে দ্রুত আরামে কাজ করে থাকে।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেঃ আদা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কাজ করে। কোলেস্টেরল রক্তের একটি ক্ষতিকর উপাদান। যা রক্তে থাকলে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করে। এবং এটি অন্যান্য রোগকেও আশ্রয় দেয়।
- ব্যথা নিরাময়েঃ আদার অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণমান রয়েছে যা প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী হিসেবে কাজ করে। এটি অস্টিওআর্থারাইটিস বা অন্য ধরনের ব্যথার সমস্যায় উপকারি হতে পারে। আদার রস বা চায়ে এটি ব্যথা কমাতে সহায়ক। বিভিন্ন প্রদাহ থেকে আদা দ্রুত স্বস্তি লাভে কাজ করে। শরীর ব্যথা এবং হাটু ব্যথা থেকে হাতা দ্রুত সমস্যা নিরাময় কাজ করে।
- বমি ভাব দূর করেঃ দূরে যাত্রার সময় বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল করতে যাদের বমি বমি ভাব হয় তারা যদি এক টুকরো আগা মুখে রাখেন তাহলে এই ভাবটি দূর হয়ে যাবে। আদা মুখে থাকলে মুখের রুচি খেয়ে আনে এবং বমি ভাবটি দূর করে দেয়।
- ওজন কমাতেঃ আদা ওজন কমাতে সাহায্য করে। আসলে আদা আমাদের ক্ষুধার চাহিদা কন্ট্রোল করে। যার ফলে দ্রুত ক্ষুধা পায় না। যারা ওজন কমাতে চান তারা দৈনিক এক গ্লাস করে আদা পানি খেতে পারেন। খেতে আপনার চাহিদা কমবে।
- এসিডিটি নিরাময়েঃ এসিডিটি নিরাময়ে আলাদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখন বাহিরের যেকোনো খাবার খাওয়ার ফলেই এসিডিটি হতে পারে। এমনকি এমন কিছু খাবার আছে পুরো শরীরের জন্য উপকারী, কিন্তু তা খেলে এসিডিটি হয়। এর ফলে ওইসব খাবার খাওয়া যায় না। এই সমস্যার সমাধানের জন্য তারা চায়ের সাথে আদা খেতে পারেন, এছাড়াও শুধু গরম পানিতে আদা দিয়ে ফুটিয়ে তা পেতে পারেন।
- পাচন সংক্রান্ত সমস্যাঃ আদার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো এটি পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। আদা খাবার খাওয়ার পর পাচন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে, গ্যাস ও পেটের অস্বস্তি কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, এটি হজম ক্ষমতা উন্নত করে এবং অম্লতা বা হজমজনিত সমস্যা দূর করে।
- মর্নিং সিকনেসঃ আদা বমি প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস বা বমির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আদা ব্যবহার করা হয়। আদার উপাদানগুলো বমি প্রতিরোধ করতে সহায়ক।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ আদা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, যা সংক্রমণ ও সাধারণ ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ আদা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এটি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্যও উপকারী, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
আদা ব্যবহারের পদ্ধতি:
আদা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন:
আদা একটি বহুমুখী উপাদান যা রান্নার পাশাপাশি নানা স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানে আদা ব্যবহারের ১০টি পদ্ধতি দেওয়া হলো:
- মাসালা: আদা পেস্ট করে মশলা বা সসের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যেমন কষা মাংসে বা শাক-সবজিতে।
- চা: আদা কুচি বা আদার রস দিয়ে চা প্রস্তুত করা হয় যা সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর। এটি ঠাণ্ডা, কাশি, এবং হজমে সাহায্য করে।
- স্যুপ: আদা স্যুপের মধ্যে যোগ করলে এটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে চিকেন স্যুপে।
- স্মুথি: আদা কুচি দিয়ে স্মুথি তৈরি করলে এটি তাজা স্বাদ দেয় এবং পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে।
- শসা: আদা, লেবুর রস, এবং মধু দিয়ে তাজা শসা তৈরি করা যায় যা প্রাকৃতিক ফ্লেভার প্রদান করে।
- চাটনি: আদা চাটনি বা সস তৈরিতে ব্যবহৃত হয় যা রুটি, পরাঠা বা স্ন্যাকসের সাথে খাওয়া যায়।
- মাসালা দুধ: গরম দুধে আদার টুকরা যোগ করে সর্দি ও কাশি থেকে স্বস্তি পাওয়া যায়।
- হাঁসের পাতা: আদা পেস্ট করে রান্না করার সময় মাংসের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়।
- বেকিং: কেক বা বিস্কুটের মধ্যে আদা গুঁড়ো দিয়ে সুগন্ধি ও তাজা স্বাদ যোগ করা যায়।
- খাদ্য স্যালাড: আদার টুকরা বা রস দিয়ে স্যালাডের সসে তাজা স্বাদ যোগ করা হয়।
অতিরিক্ত ব্যবহারে ফলে
এইসব পদ্ধতি ব্যবহার করে আদার বহুমুখিতা ও সুবিধাগুলি উপভোগ করা যায়। আদা শুধু একটি সুগন্ধি মশলা নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর গুণাবলী আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
তাই, আদাকে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। তবে সব জিনিস খাওয়ারই একটি নিয়ম রয়েছে। একবারে অতিরিক্ত আদা আমাদের বুক জ্বালা পোড়াতে শুরু করতে পারে। আস্তে আস্তে আধা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। একবারে বেশি পরিমাণে আদা খেলে আপনার অম্বল কিংবা ডায়রিয়া হতে পারে।
লেখক এর মন্তব্যঃ
অন্যান্য খাবারের চেয়ে ফলমুলে বেশি পরিমাণে পুষ্টিমান বিদ্যমান থাকে। কোন ফলে কি রকম পুষ্টিমান থাকে খাওয়ার আগে তা জেনে নেওয়া জরুরী। এবং কোন শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাও জেনে রাখা প্রয়োজন। কিছু কিছু ফল রয়েছে যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এইসব ফল সম্পর্কে জানার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url