পিনার বাটারের পুষ্টিগুণ,পিনাট বাটার খাওয়ার উপকারিতা এবং কিভাবে প্রস্তুত করবেন
আপনারা জানতে চেয়েছেন পিনার বাটারের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যাবলী। আজ এই আর্টিকেলে আমি পিনার বাটারের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যাবলী যেমন বাটেরে পুষ্টিগুণ, খাওয়ার উপকারিতা, কখন খাওয়া উচিত, কিভাবে পিনার বাটার প্রস্তুত করবেন এবং সতর্ক বলে সম্পর্কে।
পিনার বাটারের পুষ্টিগুণ
এর ১০০-গ্রাম ৫৯৭ ক্যালোরি সরবরাহ করতে পারে। এটি ৫১ শতাংশ চর্বি, ২২ শতাংশ আমিষ, ৫ শতাংশ ডায়েটারি ফাইবার সহ ২২ শতাংশ শর্করা, এবং ১ শতাংশ পানি দিয়ে গঠিত। পিনাট বাটার ফাইবার, ভিটামিন ই, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, নিয়াসিন এবং ভিটামিন বি-৬-এর একটি ভালো উৎস। এছাড়াও এতে আছে খাবারের খনিজ ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, দস্তা, তামা এবং সোডিয়াম।
পিনাট বাটার খাওয়ার উপকারিতা
আমিষে ভরপুর পিনাট বাটার প্রকৃতপক্ষে চিনাবাদাম দিয়ে তৈরি একটি পেস্ট। চিনাবাদামে কার্বোহাইড্রেট কম থাকে। সে অনুসারে পিনাট বাটার টাইপ-২ ডায়াবেটিস বা কম কার্বোহাইড্রেট ডায়েট অনুসরণকারী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত। এতে কিছু রেসভেরাট্রলও রয়েছে, যা হৃদরোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাসের প্রধান কারণ।
পিনাট বাটার (মরিচা মাখন) খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে:
প্রোটিনের উৎস: পিনাট বাটার প্রোটিনের ভালো উৎস, যা আমাদের শরীরের পেশী গঠন এবং মেরামতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর চর্বি: এতে পদ্ধতিগতভাবে স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, বিশেষ করে মনোঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ভিটামিন এবং খনিজ: পিনাট বাটার ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজে সমৃদ্ধ, যা সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ফাইবারের উৎস: এটি উচ্চ পরিমাণে ফাইবার সরবরাহ করে, যা হজমে সহায়ক এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
শক্তি প্রদান: পিনাট বাটার আপনার শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তি সরবরাহ করে, কারণ এটি পুষ্টির সমৃদ্ধ এবং ধীরগতির শক্তি মুক্তির উৎস।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিন থাকায়, এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অতএব, আপনার শরীরের প্রয়োজনীয়তা এবং খাদ্যতালিকার উপর নির্ভর করে, আপনি যখন খুশি পিনাট বাটার উপভোগ করতে পারেন। যদিও পিনাট বাটার উপকারী, তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি উচ্চ ক্যালোরি এবং চর্বি সমৃদ্ধ। মডারেশন বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা শ্রেয়।
পিনাট বাটার খাওয়ার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত:
- মডারেশন বজায় রাখুন: পিনাট বাটার উচ্চ ক্যালোরি এবং চর্বি সমৃদ্ধ, তাই এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- সাধারণত স্বাভাবিক পিনাট বাটার নির্বাচন করুন: অতিরিক্ত চিনি বা লবণযুক্ত পিনাট বাটার এড়ানো ভাল।
পিনাট বাটার কখন খাওয়া উচিত?
বাদাম, বীজ ও দইয়ের সমন্বয়টিও প্রতিদিনি পূরণ করতে পারে সুস্বাদু খাদ্যের চাহিদা। তাছাড়া আলাদাভাবে এগুলো গ্রহণে স্বাস্থ্যগুণের ব্যাপার তো থাকছেই। তাই স্বাস্থ্য রক্ষার্থে অল্প করে নিত্যদিন যে খাবারগুলো দেহে প্রবেশ করছে তার প্রতি সতর্ক নজর রাখা জরুরি।পিনাট বাটার কখন খাওয়া উচিত তা আপনার জীবনযাত্রার অভ্যাস এবং স্বাস্থ্যের লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে। সাধারণত এটি নিচের পরিস্থিতিতে খাওয়া উপকারী হতে পারে:
সকাল বেলা: প্রাতঃরাশে পিনাট বাটার যুক্ত করে আপনি একটি শক্তিশালী এবং সুষম প্রাতঃরাশ পেতে পারেন। এটি প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সরবরাহ করে, যা সারাদিনের জন্য শক্তি দেয়।
মধ্যাহ্নভোজনের পর: দুপুরের খাবারের পর একটি ছোট পিনাট বাটার স্ন্যাক আপনাকে অতিরিক্ত শক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী সাসটেনেন্স প্রদান করতে পারে।
এক্সারসাইজের আগে: আপনার ব্যায়াম করার আগে একটি ছোট পিনাট বাটার স্ন্যাক (যেমন পিনাট বাটার টোস্ট) শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি এবং প্রোটিন সরবরাহ করতে পারে।
এক্সারসাইজের পর: ব্যায়ামের পরে পিনাট বাটার খেলে শরীর দ্রুত প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে পারে এবং পেশী মেরামতে সাহায্য করে।
সন্ধ্যার স্ন্যাক হিসেবে: যদি আপনি সন্ধ্যায় কিছু খেতে চান, তবে পিনাট বাটার সেরা বিকল্প হতে পারে, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং শক্তি প্রদান করে।
পিনাট বাটার কিভাবে প্রস্তুত করবেন
এখন আপনার ঘরেই তৈরি তাজা পিনাট বাটার প্রস্তুত! আপনি এটি স্যান্ডউইচ, স্মুথি, বা অন্য যে কোনও রেসিপিতে ব্যবহার করতে পারেন। পিনাট বাটার রচনা বেশ সহজ এবং আপনি বাড়িতেই এটি তৈরি করতে পারেন। এখানে একটি সাধারণ পিনাট বাটার তৈরির রেসিপি দেওয়া হলো:
উপকরণ:
- ২ কাপ সাদা পিনাট (প্রসেসড বা ভেজা হতে পারে)
- ১/২ চা চামচ লবণ (স্বাদ অনুসারে)
- ১ থেকে ২ চা চামচ মধু (অপশনাল, স্বাদ মিষ্টি করতে)
- ১ থেকে ২ চা চামচ তেল (যদি পিনাট বাটার অতিরিক্ত ঘন হয়ে থাকে)
প্রণালী:
পিনাট প্রস্তুতি:
- যদি আপনি রান্না করা পিনাট ব্যবহার করছেন, তবে সেগুলোকে একটু ঠান্ডা হতে দিন।
পিনাট প্রক্রিয়া:
- একটি ফুড প্রসেসরে পিনাটগুলি যোগ করুন। এটি মিহি গুঁড়া হতে শুরু করবে, তবে কিছুক্ষণ পর এটি একটি পেস্টে পরিণত হবে।
- প্রথমে এটি একটু কোষ্ঠ হয়ে উঠবে, কিন্তু প্রক্রিয়া চালিয়ে যান যতক্ষণ না এটি মসৃণ হয়ে আসে।
স্বাদ ও ঘনত্ব ঠিক করা:
- পিনাট বাটার মসৃণ হওয়ার পর, এতে লবণ এবং মধু (যদি ব্যবহার করছেন) যোগ করুন। আবার কিছুক্ষণ প্রক্রিয়া করুন।
- যদি পিনাট বাটার খুব ঘন হয়ে থাকে, তবে তেল যোগ করুন। তেল পিনাট বাটারকে মসৃণ এবং ব্যবহারযোগ্য করবে।
সংরক্ষণ:
- পিনাট বাটারটি একটি পরিষ্কার কাঁচের জারে রাখুন এবং এয়ারটাইটভাবে বন্ধ করুন। এটি সাধারণত রেফ্রিজারেটরে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
কেন খাবেন পিনাট বাটার?
পিনাট বাটার খাওয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। এখানে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো:
১. পুষ্টিকর: পিনাট বাটার প্রোটিন, ফ্যাট, এবং নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলসের ভালো উৎস। এতে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, যা শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২. শক্তি বৃদ্ধিকারক: এতে থাকা প্রোটিন এবং চর্বি শরীরকে দীর্ঘ সময় শক্তি দিতে সাহায্য করে। এটা একটানা তৃপ্তি ও শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৩. হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য: পিনাট বাটারে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভাল কোলেস্টেরল বাড়াতে সহায়তা করে।
৪. উদ্বেগ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: এতে থাকা ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের কার্যক্রম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে।
৫. স্বাদ এবং বৈচিত্র্য: পিনাট বাটার নানা রেসিপিতে ব্যবহার করা যায়—ব্রেডে, স্মুথিতে, স্যান্ডউইচে, বা ফলের সাথে। এটি খাবারের স্বাদ বাড়ায় এবং মজাদার করে তোলে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ: সঠিক পরিমাণে পিনাট বাটার খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা হতে পারে, কারণ এটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তৃপ্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
লেখক এর মন্তব্যঃ
তবে মনে রাখবেন, পিনাট বাটার উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত, তাই সঠিক পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে। অন্যান্য খাবারের চেয়ে ফলমুলে বেশি পরিমাণে পুষ্টিমান বিদ্যমান থাকে। আর পিনাট বাটার যেহেতু বাদামের এক বিশেষ ধরনের উপকরণ সেহেতু এতে অনেক বেশি পরিমাণে পুষ্টি গুণ বিদ্যমান থাকে।
কোন ফলে কি রকম পুষ্টিমান থাকে খাওয়ার আগে তা জেনে নেওয়া জরুরী। এবং কোন শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাও জেনে রাখা প্রয়োজন। কিছু কিছু ফল রয়েছে যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এইসব ফল সম্পর্কে জানার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন।
আরো পড়ুনঃ পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক কিছু ফল।
তাই স্বাস্থ্যবান জীবনযাপনের জন্য বাদামকে আপনার খাবার তালিকায় স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ। আপনাকে যদি আমি উপযুক্ত তথ্য দিতে পারি তাহলে আপনি আপনার সকল বন্ধুদের সাথে এ বিষয়টি শেয়ার করবেন এবং ভালো লাগলে আমার ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করবেন।আপনাদের যদি আমার লিখা পড়ে ভালো লাগে তাহলে ইচ্ছা হলে আমার ব্লগটি নিয়মিত পরিদর্শন করবেন। সকলে ভালো থাকবেন ফি আমানিল্লাহ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url