অ্যাডেনয়েড ইনফেকশনের লক্ষণ,কারণ,প্রতিকার

অ্যাডেনয়েড হলো একটি ছোট লসিকাগ্রন্থি (lymphatic tissue) যা নাকের পিছনের অংশে এবং গলার উপরের দিকে অবস্থিত। এটি মূলত শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন এটি সংক্রমিত বা প্রদাহগ্রস্ত হয়, তখন এই অবস্থাকে অ্যাডেনয়েড ইনফেকশন বলে।

সংক্রমণের কারণ:

  1. ভাইরাসজনিত সংক্রমণ: সাধারণ সর্দি, ফ্লু বা অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস অ্যাডেনয়েডকে সংক্রমিত করতে পারে।
  2. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: স্ট্রেপটোককাস বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
  3. অ্যালার্জি: ধুলা, ধোঁয়া বা অন্যান্য অ্যালার্জিজনিত কারণ অ্যাডেনয়েডকে প্রদাহগ্রস্ত করতে পারে।
  4. প্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতা: শিশুদের ইমিউন সিস্টেম অপরিণত থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি হয়।

অ্যাডেনয়েড ইনফেকশনের লক্ষণ:

  1. নাক দিয়ে শ্বাস নিতে সমস্যা: অ্যাডেনয়েড ফুলে গেলে নাসারন্ধ্র আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  2. ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট: রাতে নাক বন্ধ হয়ে গেলে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হয় এবং ঘুমের মধ্যে শ্বাস থেমে যাওয়ার (sleep apnea) ঝুঁকি থাকে।
  3. ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা: সর্দি-কাশি বা জ্বর হওয়ার প্রবণতা।
  4. মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া: দীর্ঘ সময়ের জন্য মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া স্বাভাবিক হয়ে যায়।
  5. কান ইনফেকশন: অ্যাডেনয়েড বড় হয়ে কান এবং গলার মধ্যকার ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ করে দিলে কান ব্যথা ও ইনফেকশন হতে পারে।
  6. গলার ব্যথা: সংক্রমণের কারণে গলা ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়।
  7. অস্বাভাবিক কণ্ঠস্বর: নাক বন্ধ থাকার কারণে গলা দিয়ে আসা শব্দ ভিন্ন রকম শোনাতে পারে।

প্রতিকার ও চিকিৎসা:

  1. ওষুধ:
    • সংক্রমণ কমাতে অ্যান্টিবায়োটিক।
    • প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ বা অ্যান্টিহিস্টামিন।
  2. নাক পরিষ্কার রাখা: স্যালাইন সলিউশন ব্যবহার করে নাক পরিষ্কার করা।
  3. বিশ্রাম ও তরল গ্রহণ: রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে এবং তরল পান করতে উৎসাহিত করা।
  4. অ্যাডেনয়েডেক্টমি (সার্জারি):
    • যদি সংক্রমণ বারবার হয় বা অ্যাডেনয়েড বড় হয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি করে, তবে অস্ত্রোপচার করে এটি অপসারণ করা হতে পারে।

কাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়?

  • অ্যাডেনয়েড ইনফেকশন সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কারণ তাদের অ্যাডেনয়েড টিস্যু বড় এবং সক্রিয় থাকে। বড়দের মধ্যে এই সমস্যা তুলনামূলক বিরল।

অ্যাডেনয়েড ইনফেকশন: পরামর্শ

যদি এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয় এবং স্বাভাবিক শ্বাস বা ঘুমে সমস্যা হয়, তবে একজন ইএনটি (নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ) ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যখন অ্যাডেনয়েড ইনফেকশন ঘটে, এটি সঠিকভাবে পরিচালনা এবং চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থার জন্য নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো:

১. ঘরোয়া যত্ন:

  1. নাক পরিষ্কার রাখা:
    • স্যালাইন স্প্রে বা স্যালাইন ওয়াটার দিয়ে নাক পরিষ্কার করুন।
    • এটি নাকের বন্ধভাব কমাতে সহায়ক।
  2. বাষ্প থেরাপি:
    • গরম পানির বাষ্প নিন। এটি নাক খুলতে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করতে সাহায্য করে।
  3. তরল গ্রহণ:
    • পর্যাপ্ত পানি, স্যুপ বা উষ্ণ পানীয় পান করুন।
    • এটি শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং সংক্রমণ কমায়।
  4. বিশ্রাম:
    • শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বেশি করে বিশ্রাম নিন।

২. ওষুধ সেবন:

  1. ডাক্তারের নির্দেশ অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক:
    • যদি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হয়, ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন।
    • পূর্ণ ডোজ শেষ করা জরুরি, যদিও উপসর্গ কমে যায়।
  2. পেইন রিলিভার:
    • গলা ব্যথা বা জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন সেবন করা যেতে পারে।
    • অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ব্যবহার করবেন।
  3. অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধ:
    • যদি ইনফেকশন অ্যালার্জির কারণে হয়, ডাক্তার অ্যান্টিহিস্টামিন দিতে পারেন।

অ্যাডেনয়েড-ইনফেকশন


৩. চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন হলে:

  1. ইএনটি বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন যদি:
    • শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
    • ঘুমের সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
    • কান ব্যথা বা কান ইনফেকশন হয়।
    • ইনফেকশন বারবার ফিরে আসে।
  2. অ্যাডেনয়েডেক্টমি (সার্জারি):
    • যদি ইনফেকশন খুবই ঘন ঘন হয় বা অ্যাডেনয়েড বড় হয়ে নাক ও গলার পথে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে অস্ত্রোপচার করে অ্যাডেনয়েড অপসারণ করা হতে পারে।

৪. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  1. ধুলো, ধোঁয়া বা ধূমপান থেকে দূরে থাকুন।
  2. সর্দি বা ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধে গরম পোশাক পরুন এবং ঠান্ডা পানীয় বা খাবার এড়িয়ে চলুন।
  3. শিশুদের সঠিক পুষ্টিকর খাবার দিন যা তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

অ্যাডেনয়েড-ইনফেকশন-2


কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?

  1. যদি শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
  2. দীর্ঘদিন ধরে নাক বন্ধ থাকে।
  3. ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে সমস্যা হয় বা জোরে ঘুমের শব্দ হয়।
  4. বারবার কান ইনফেকশন দেখা দেয়।
পরামর্শ:
অ্যাডেনয়েড ইনফেকশন অবহেলা করলে তা দীর্ঘমেয়াদি শ্বাস ও ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url